অহংকার নিয়ে কোরআনের উক্তি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে আত্মঅহমিকার কোন স্থান ইসলামে নেই। অহংকার এমন এক ব্যাধি, যা ধীরে ধীরে মানুষের আত্মাকে গ্রাস করে ফেলে, এবং শেষ পর্যন্ত ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়। অহংকার নিয়ে কোরআনের উক্তি গুলো শুধু একটি ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি নয়, বরং এগুলো এক একটি বাস্তব জীবনের উপদেশও।
আল্লাহ তাআলা কোরআনে অহংকারী ব্যক্তিদের সম্পর্কে কঠিন সতর্কবাণী দিয়েছেন। যারা নিজেদের বড় ভাবে, অন্যকে তুচ্ছ ভাবে, তাদের জন্য রয়েছে আল্লাহর পক্ষ থেকে কঠিন শাস্তির হুঁশিয়ারি। তাই ইসলাম শুধুমাত্র নম্রতা ও বিনয়ের উপর জোর দেয়নি, বরং অহংকারের বিরুদ্ধে স্পষ্ট অবস্থান নিয়েছে। এই কারণে অহংকার নিয়ে কোরআনের উক্তিগুলো আমাদের জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।
আমাদের দৈনন্দিন জীবনে অহংকার আমাদের সম্পর্কগুলো নষ্ট করে দেয়, নেতৃত্বে ঘাটতি আনে, আত্মপ্রবঞ্চনার শিকার করে তোলে। তাই এই বিষয়গুলো নিয়ে গভীরভাবে ভাবা দরকার, বিশেষত যখন ইসলাম এই বিষয়ে স্পষ্ট দিকনির্দেশনা দিয়েছে।
অহংকার নিয়ে কোরআনের উক্তি
তাহলে দেখে নেয়া যাক বাছাইকৃত সেরা অহংকার নিয়ে কোরআনের উক্তি, যা জীবন গঠনে এবং ফেসবুক ক্যাপশন হিসেবেও কাজে আসবে।
১. “নিশ্চয়ই আল্লাহ অহংকারী ও অহংকারকারীদেরকে পছন্দ করেন না।” — আল-কোরআন (সূরা আন-নাহল ১৬:২৩)
২. “তুমি পৃথিবীতে দম্ভভরে চলাফেরা করো না। নিশ্চয়ই তুমি পৃথিবী বিদীর্ণ করতে পারবে না এবং উচ্চতায় পর্বতের সমান হতে পারবে না।” — আল-কোরআন (সূরা আল-ইসরা ১৭:৩৭)
৩. “আল্লাহ বলেন, ‘অহংকার আমার চাদর এবং গৌরব আমার আবরণ। যে ব্যক্তি এগুলোর যে কোন একটি নিয়ে আমার সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে, আমি তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবো।’” — সহিহ মুসলিম: ২৬২০
৪. “যে ব্যক্তি অন্তরে অণু পরিমাণ অহংকার রাখে, সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।” — সহিহ মুসলিম: ৯১
৫. “তিন ব্যক্তির দিকে কিয়ামতের দিনে আল্লাহ তাকাবেন না: মা-বাবার অবাধ্য, মদ্যপায়ী এবং অহংকারী ব্যক্তি।” — তিরমিজি: ২০০৫
৬. “তোমরা এমন ভাবে চলো না যেন তোমরা পৃথিবীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, কারণ একদিন এই মাটি তোমার দেহকে গ্রাস করে ফেলবে।” — হজরত আলী (রা.)
৭. “তুমি যখন দম্ভ করো, তখন জেনে রাখো, তুমি এক সময় বীর্য ছিলে এবং একদিন মৃতদেহ হয়ে যাবে।” — হজরত ওমর (রা.)
৮. “নম্রতা হলো জ্ঞানীর গহনা, আর অহংকার হলো মূর্খের অভিশাপ।” — ইমাম গাজ্জালি (রহ.)
৯. “আল্লাহ কাউকে ধ্বংস করতে চাইলে, প্রথমে তার থেকে নম্রতা কেড়ে নেন।” — হজরত আলী (রা.)
১০. “তুমি যদি নিজেকে বড় ভাবো, তবে স্মরণ করো তোমার শুরু কী ছিল এবং শেষ কোথায় হবে।” — হজরত উসমান (রা.)
১১. “মানুষ যতই জ্ঞানী হোক, যদি তার মধ্যে অহংকার থাকে, সে প্রকৃত জ্ঞানী নয়।” — ইমাম শাফেয়ী (রহ.)
১২. “মুমিন ব্যক্তি কখনো অহংকার করতে পারে না। সে জানে, তার সব কৃতিত্ব আল্লাহর পক্ষ থেকে।” — ইমাম আবু হানিফা (রহ.)
১৩. “অহংকার হচ্ছে এমন এক রোগ, যার ফলে মানুষ হক গ্রহণ করতে পারে না।” — ইবনুল কাইয়্যিম (রহ.)
১৪. “নম্রতা মানুষকে উঁচু করে, আর অহংকার নিচে নামিয়ে দেয়।” — হজরত হাসান বসরি (রহ.)
১৫. “তুমি যখন গর্ব করো, তখন ভাবো, আল্লাহ চাইলে এই মুহূর্তেই তোমার শ্বাস বন্ধ করে দিতে পারেন।” — ইবনে তাইমিয়া (রহ.)
১৬. “আল্লাহ যাকে ইজ্জত দেন, সে কখনো অহংকারী হতে পারে না।” — হজরত আবু বকর (রা.)
১৭. “অহংকার শুধু শয়তানের কাজ, আদম সন্তানের জন্য নয়।” — হজরত ওমর (রা.)
১৮. “তুমি যদি নিজেকে অন্যের চেয়ে বড় ভাবো, তবে তুমি শয়তানের পথ অনুসরণ করছো।” — হজরত আলী (রা.)
১৯. “যে ব্যক্তি নিজেকে বড় ভাবে, সে আল্লাহর দৃষ্টিতে সবচেয়ে ছোট।” — ইমাম মালেক (রহ.)
২০. “তুমি যদি সৎকাজ করেও অহংকার করো, তবে সেই কাজ আল্লাহর কাছে মূল্যহীন হয়ে যাবে।” — ইমাম নববী (রহ.)

২১. “আল্লাহর সন্তুষ্টি পেতে চাইলে, অহংকার ত্যাগ করো।” — হজরত আবু হুরায়রা (রা.)
২২. “শয়তানকে ধ্বংস করেছিল তার অহংকার।” — আল-কোরআন (সূরা আল-আ’রাফ ৭:১২)
২৩. “অহংকারী ব্যক্তিরা কিয়ামতের দিন পিপীলিকার মতো হবে, তাদের কোনো মর্যাদা থাকবে না।” — তিরমিজি: ২০০১
২৪. “মুমিনের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে বিনয়, অহংকার নয়।” — হাদীস
২৫. “তুমি যত বড়ই হও না কেন, একদিন তোমাকে মাটির নিচেই যেতে হবে।” — ইসলামিক প্রবাদ
২৬. “বিনয় শিখে নাও, কারণ অহংকার সব সম্পর্ক নষ্ট করে।” — হজরত আলী (রা.)
২৭. “যে যত বড়, তার তত বিনয়ী হওয়া উচিত।” — ইমাম শাফেয়ী (রহ.)
২৮. “মানুষের আসল সৌন্দর্য তার বিনয়।” — ইবনু আল জাওযি (রহ.)
২৯. “তুমি যেই অবস্থানে থাকো না কেন, তোমার চরিত্র নম্র হওয়া উচিত।” — হজরত উমর ইবনে আবদুল আজিজ (রহ.)
৩০. “তুমি যত বিনয়ী হবে, আল্লাহ ততই তোমাকে সম্মানিত করবেন।” — হাদীস
৩১. “অহংকার হলো হৃদয়ের কালো ছায়া, যা ঈমানের আলোকে ঢেকে দেয়।” — ইমাম গাজ্জালী (রহ.)
৩২. “নম্রতা হলো এমন গুণ, যা হৃদয়কে আল্লাহর নৈকট্য পর্যন্ত পৌঁছে দেয়।” — হজরত আলী (রাঃ)
৩৩. “অহংকার মানুষকে জান্নাত থেকে দূরে সরিয়ে দেয়।” — সহিহ মুসলিম
৩৪. “অহংকারের ফলে ব্যক্তি শয়তানের অনুসারী হয়ে যায়।” — ইমাম নববী (রহ.)
৩৫. “যে ব্যক্তি নিজেকে ছোট করে দেখতে জানে, আল্লাহ তাকে বড় করে।” — হজরত মুহাম্মদ (ﷺ)
৩৬. “অহংকার হচ্ছে ইমানের শত্রু।” — ইমাম আবু হানিফা (রহ.)
৩৭. “নম্রতাই সেরা ধর্মের মাধুর্য।” — হজরত ফাতিমা (রাঃ)
৩৮. “যে ব্যক্তি অহংকার ত্যাগ করে, আল্লাহ তাকে সন্মান দেয়।” — ইমাম শাফেয়ী (রহ.)
৩৯. “অহংকার মানুষের পতনের প্রথম ধাপ।” — হজরত ওমর (রাঃ)
৪০. “যখন মানুষ নিজেকে সব থেকে বড় মনে করে, তখন সে সবচেয়ে ক্ষুদ্র।” — সহিহ বুখারি
৪১. “নম্রতা হলো ইবাদতের এক ধরনের প্রকাশ।” — ইবনে তাইমিয়া (রহ.)
৪২. “অহংকার মানুষের নেকিয়াতকে নষ্ট করে।” — ইমাম মালেক (রহ.)
৪৩. “নম্র ব্যক্তিই আল্লাহর নৈকট্যে পৌঁছায়।” — হাফিজ শিরাজী
৪৪. “অহংকার থেকে দূরে থাক, কারণ তা কবর পর্যন্ত তোমার সঙ্গী।” — হজরত হাসান বসরি (রহ.)
৪৫. “অহংকার ত্যাগ করাই হলো মুমিনের প্রকৃত শক্তি।” — হজরত আবু বকর (রাঃ)
৪৬. “নম্রতা মানুষের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে।” — প্রফেট মুহাম্মদ (ﷺ)
৪৭. “অহংকার মানুষকে অন্ধ করে দেয়।” — ইমাম গাজ্জালী (রহ.)
৪৮. “নম্রতা ঈমানের সেরা চিহ্ন।” — সহিহ মুসলিম
৪৯. “অহংকার মানুষের পতন নিশ্চিত করে।” — হজরত আলী (রাঃ)
৫০. “নম্রতা হলো জান্নাতের চাবিকাঠি।” — প্রফেট মুহাম্মদ (ﷺ)
উপসংহার : অহংকার নিয়ে কোরআনের উক্তি আমাদের জীবনের জন্য একটি বাস্তব পথনির্দেশ
অহংকার নিয়ে কোরআনের উক্তি আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়—নম্রতাই একজন মুসলিমের আসল পরিচয়। যারা সত্যিকারে আল্লাহর কাছে মূল্যবান হতে চায়, তাদের হৃদয়ে অহংকারের কোনো স্থান নেই। এই উক্তিগুলো আমাদের প্রতিদিনের জীবনে বিনয়কে অগ্রাধিকার দিতে শেখায়।
ইসলামে অহংকারকে শুধু একটি চারিত্রিক দোষ নয়, বরং একটি মারাত্মক আত্মিক রোগ হিসেবে দেখা হয়েছে। অহংকার নিয়ে কোরআনের উক্তিগুলো তাই আমাদের প্রতিটি কাজে, প্রতিটি সিদ্ধান্তে, এমনকি প্রতিটি কথাতেও বিনয়ের ছাপ রাখার কথা বলে।
যারা জীবনে আল্লাহর রহমত এবং মানুষের ভালবাসা পেতে চান, তাদের উচিত অহংকার পরিহার করে চলা। অহংকার নিয়ে কোরআনের উক্তিগুলো যদি আমরা মনের মধ্যে ধারণ করি, তবে নিঃসন্দেহে তা আমাদের ব্যক্তিত্ব গঠনে এবং পার্থিব ও পরকালীন সফলতায় সহায়ক হবে।