অহংকার নিয়ে হাদিসের উক্তি আমাদের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পাঠগুলোর একটি দেয়। অহংকার এমন এক রোগ, যা মানুষকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়, তা সে যত বড় জ্ঞানী কিংবা ধনীই হোক না কেন। অহংকার নিয়ে হাদিসের উক্তিগুলো আমাদের শেখায় বিনয়, নম্রতা এবং নিজের সীমাবদ্ধতা বুঝে চলার কথা। রাসুলুল্লাহ (সা.) এবং সাহাবিদের জীবন থেকে আমরা দেখতে পাই, তাঁরা কতটা বিনয়ী ছিলেন, যদিও তাঁদের ছিল শ্রেষ্ঠ মর্যাদা।
ইসলামে অহংকারকে কঠিনভাবে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। অহংকার নিয়ে হাদিসের উক্তিগুলোর মাঝে এমন অনেক বক্তব্য রয়েছে, যেগুলো আমাদের চরিত্র গঠনে সাহায্য করে, আত্মসমালোচনার চোখ খুলে দেয়। আজকের সমাজে যেখানে মানুষ সামান্য কিছু পাওয়ার পরেই নিজের পায়ের নিচে মাটি খুঁজে পায় না, সেখানে এই উক্তিগুলো আমাদের মনে করিয়ে দেয়, আসল মর্যাদা আল্লাহর সামনে কীভাবে পাওয়া যায়।
চলুন, আমরা জেনে নিই কিছু বাছাইকৃত অহংকার নিয়ে হাদিসের উক্তি, যা শুধু জীবনের শিক্ষা নয়, বরং ফেসবুক ক্যাপশন হিসেবেও বেশ অর্থবহ হতে পারে।
অহংকার নিয়ে হাদিসের উক্তি
তাহলে দেখে নেয়া যাক বাছাইকৃত সেরা অহংকার নিয়ে হাদিসের উক্তি, যা জীবন গঠনে এবং ফেসবুক ক্যাপশন হিসেবেও কাজে আসবে।
১. রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: “যার অন্তরে একটি সরিষা পরিমাণ অহংকার থাকবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।” (সহীহ মুসলিম: ৯১)
২. “আল্লাহ্ বলেন, গর্ব আমার চাদর এবং মহত্ব আমার আবরণ। যে কেউ তা নিয়ে টানাটানি করে, আমি তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করব।” (সহীহ মুসলিম: ২৬২০)
৩. রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন: “তিন ধরনের ব্যক্তি আছে যাদের সঙ্গে আল্লাহ কিয়ামতের দিন কথা বলবেন না… তাদের একজন হলো অহংকারী দরিদ্র।” (সহীহ মুসলিম: ১০৬)
৪. হযরত ওমর (রাঃ) বলেন: “যে ব্যক্তি নিজেকে বড় মনে করে, আল্লাহ তাকে ছোট করে দেন।”
৫. রাসুল (সা.) বলেন: “আল্লাহ অহংকারকারীদের পছন্দ করেন না।” (সহীহ বুখারী)
৬. ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেন: “অহংকার মানে হলো—মানুষকে তুচ্ছ করা এবং সত্যকে অস্বীকার করা।” (সহীহ মুসলিম)
৭. হাদীসে এসেছে: “সবচেয়ে খারাপ কাপড় হলো যেটা অহংকারের জন্য পরা হয়।” (আবু দাউদ: ৪০১৫)
৮. রাসুল (সা.) বলেছেন: “যে ব্যক্তি বড়াই করে চলে, কিয়ামতের দিন তাকে তৃণমূলের মতো ছোট করা হবে।” (তিরমিযি: ১৯৯৫)
৯. হযরত আলী (রাঃ) বলেন: “অহংকার জ্ঞানহীনতার সন্তান।”
১০. রাসুল (সা.) বলেন: “তুমি যদি জানো তোমার রিজিক কে দেয়, তবে অহংকার তোমার মধ্যে থাকতে পারে না।”
১১. আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত: “রাসুল (সা.) বলেন, ‘আল্লাহ যাকে হেদায়েত দেন, তাকে কেউ ভ্রান্ত করতে পারে না। আর যাকে তিনি গোমরাহ করেন, তাকে কেউ সঠিক পথে আনতে পারে না।’” অহংকারী সেই দ্বিতীয় দলের অন্তর্ভুক্ত হয়।
১২. হযরত হাসান বসরি (রহঃ) বলেন: “অহংকার হলো আত্মাকে নিজের চেয়ে নিচের মানুষদের বড় ভাবানো।”
১৩. রাসুল (সা.) বলেন: “তোমরা অহংকার করো না, কেননা আল্লাহ গর্বকারীদের ভালোবাসেন না।” (মুসলিম: ২৭১৫)
১৪. রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন: “অহংকারী ব্যক্তির চেহারার জ্যোতি আল্লাহ মুছে দেন।”
১৫. ইমাম গাজ্জালী (রহ.) বলেন: “অহংকার এমন ব্যাধি, যা সব ভালো আমলকে নিঃশেষ করে দেয়।”
১৬. রাসুল (সা.) বলেন: “তুমি যখন নিজের কৃতিত্বে মুগ্ধ হও, বুঝবে—তোমার ঈমান ঝুঁকিতে আছে।”
১৭. হযরত আবু বকর (রাঃ) বলেন: “আমরা যখন দীনদার ছিলাম, তখন সম্মান পেয়েছি; যখন অহংকার করেছি, তখন লাঞ্ছিত হয়েছি।”
১৮. রাসুল (সা.) বলেন: “আল্লাহর সামনে সবচেয়ে নিকৃষ্ট ব্যক্তি সে, যে অহংকার করে মানুষের সঙ্গে।”
১৯. রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন: “অহংকার ঈমানের সঙ্গে একসাথে থাকতে পারে না।”
২০. হযরত উসমান (রাঃ) বলেন: “যে অহংকার করে, সে জ্ঞানের আলো থেকে বঞ্চিত হয়।”

২১. হাদীসে এসেছে: “তিন জিনিস ধ্বংস ডেকে আনে: লোভ, হিংসা, অহংকার।” (বায়হাকি)
২২. আল্লাহ তাআলা বলেন: “আমি সেই ব্যক্তিকে সবচেয়ে ভালোবাসি, যে বিনয়ী হয়ে চলে।”
২৩. ইবনে তাইমিয়া (রহ.) বলেন: “বিনয় হচ্ছে ইমানের অংশ, আর অহংকার কুফরির দিকে নিয়ে যায়।”
২৪. হযরত আবু জর (রাঃ) বলেন: “তোমার যদি ভালো কিছু থাকে, তাও মনে রেখো—এটা আল্লাহর অনুগ্রহ, তোমার কৃতিত্ব নয়।”
২৫. রাসুল (সা.) বলেন: “অহংকারী মানুষদের কিয়ামতের দিন পিঁপড়ার মতো করে তোলা হবে।”
২৬. কোরআনে আল্লাহ বলেন: “নিশ্চয়ই আল্লাহ অহংকারী ও দাম্ভিকদের পছন্দ করেন না।” – (সূরা নাহল: ২৩)
২৭. ইমাম মালিক (রহ.) বলেন: “যে যত বেশি জানে, সে তত কম অহংকারী হয়।”
২৮. রাসুল (সা.) বলেন: “যে ব্যক্তি মানুষের উপর গর্ব করে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাকে তুচ্ছ করবেন।”
২৯. হযরত সুলতান বাহু (রহ.) বলেন: “যার অন্তরে অহংকার বাসা বাঁধে, তার অন্তর থেকে আল্লাহর প্রেম সরে যায়।”
৩০. হাদীসে এসেছে: “আল্লাহ বলেন, আমি ধন-সম্পদ দিয়েছি যাতে আমার বান্দারা কৃতজ্ঞ হয়, অহংকারী না হয়।”
৩১. আবু দারদা (রাঃ) বলেন: “তুমি যতই ইবাদত করো না কেন, যদি অহংকার থাকে তবে তা বরবাদ।”
৩২. ইমাম শাফেয়ী (রহ.) বলেন: “জ্ঞানী মানুষ অহংকারী হয় না।”
৩৩. রাসুল (সা.) বলেন: “তুমি যত উচ্চ মর্যাদার হও না কেন, মৃত্যু তোমাকে সমান করে দেবে।”
৩৪. কোরআনে বলা হয়েছে: “তোমরা পৃথিবীতে অহংকার করে চল না।” – (সূরা ইসরা: ৩৭)
৩৫. হযরত উমর ইবন আবদুল আজিজ (রহ.) বলেন: “অহংকার মানুষের আত্মাকে মেরে ফেলে।”
৩৬. রাসুল (সা.) বলেন: “তুমি যদি বিনয় না শিখো, আল্লাহ তোমাকে নিচে নামিয়ে দেবেন।”
৩৭. হাদীসে এসেছে: “তিনটি জিনিস জান্নাত থেকে বঞ্চিত করে—হিংসা, অহংকার, ও মিথ্যাচার।”
৩৮. ইমাম নওয়াবী (রহ.) বলেন: “বিনয় ছাড়া ইমান পূর্ণ হয় না।”
৩৯. রাসুল (সা.) বলেন: “নিজেকে বড় ভাবার অর্থ হলো, আল্লাহর জায়গা দখল করার চেষ্টা করা।”
৪০. আব্দুল কাদের জিলানী (রহ.) বলেন: “অহংকার হচ্ছে আল্লাহর একচ্ছত্র গুণ, তুমি তা গ্রহণ করলে ধ্বংস হবেই।”
উপসংহারঃ অহংকার নিয়ে হাদিসের উক্তি থেকে আমরা কী শিখি
অহংকার নিয়ে হাদিসের উক্তি আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়, অহংকার শুধু ব্যক্তিগত পাপ নয়, এটা একটা সামাজিক ব্যাধি। যখন কেউ নিজেকে অন্যদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ ভাবে, তখন সে শুধু মানুষের দৃষ্টিতে নয়, বরং আল্লাহর কাছেও অপছন্দনীয় হয়ে পড়ে।
অহংকার নিয়ে হাদিসের উক্তিগুলো বারবার আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, এই দুনিয়া ক্ষণস্থায়ী, এখানে কাউকে বড়াই করার কিছু নেই। রাসুল (সা.) নিজেই ছিলেন সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ মানুষ, অথচ তিনি ছিলেন সবচেয়ে বিনয়ী। তাই আমাদের উচিত অহংকার থেকে দূরে থাকা এবং বিনয়ী জীবনধারা অবলম্বন করা।
শেষ কথা, অহংকার নিয়ে হাদিসের উক্তিগুলো যদি আমরা মনেপ্রাণে গ্রহণ করি, তবে ব্যক্তিজীবন যেমন সুন্দর হবে, তেমনি সমাজেও নেমে আসবে সত্যিকার শান্তি। এই কথাগুলো শুধু পাঠ্য নয়, এগুলো জীবনের বাস্তব পথে চলার জন্য গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা।