জীবনসঙ্গী নিয়ে ইসলামিক উক্তি প্রতিটি মুসলমানের জন্য জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ পথনির্দেশনা। ইসলামে জীবনসঙ্গী নির্বাচন কেবল দাম্পত্য জীবনের বিষয় নয়, বরং তা আখিরাত পর্যন্ত একটি সঙ্গীর সাথে পথ চলার পবিত্র অঙ্গীকার। তাই জীবনসঙ্গী নিয়ে ইসলামিক উক্তি শুধু একটি সম্পর্কের কথা বলে না, বরং আত্মা ও ঈমানের গভীর সংযোগকেই তুলে ধরে।
প্রিয় নবী মুহাম্মদ ﷺ আমাদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন কেমন জীবনসঙ্গী নির্বাচন করা উচিত এবং সেই জীবনসঙ্গীর সঙ্গে সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিত। ইসলাম বলে, একজন ভালো জীবনসঙ্গী দ্বীনের অর্ধেক পূর্ণ করে দেয়। তাই জীবনসঙ্গী নিয়ে ইসলামিক উক্তি আমাদের এই গভীর সম্পর্কের পবিত্রতা ও গুরুত্ব তুলে ধরে। যে পরিবার ইসলামি মূল্যবোধের উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে, সেখানে শান্তি ও রহমতের বরকত বর্ষিত হয়।
জীবনসঙ্গী নিয়ে ইসলামিক উক্তি
তাহলে দেখে নেয়া যাক বাছাইকৃত সেরা জীবনসঙ্গী নিয়ে ইসলামিক উক্তি, যা জীবন গঠনে এবং ফেসবুক ক্যাপশন হিসেবেও কাজে আসবে।
১. “নারীদের মধ্যে তাকে বিয়ে করো যে দ্বীনদার; তাহলে তুমি সফল হবে।” – সহীহ বুখারী, ৫১৩০
২. “দুনিয়া হচ্ছে উপভোগের বস্তু এবং দুনিয়ার সর্বোত্তম উপভোগ হচ্ছে নেককার স্ত্রী।” – সহীহ মুসলিম, ১৪৬৭
৩. “তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম সেই ব্যক্তি, যে তার স্ত্রীর সাথে উত্তম আচরণ করে।” – তিরমিযি, ৩৮৯৫
৪. “স্ত্রী হচ্ছে স্বামীর অর্ধেক ঈমানের প্রতিচ্ছবি।” – ইমাম গাযযালী
৫. “যে পুরুষ তার স্ত্রীকে ভালোবাসে এবং সম্মান করে, আল্লাহ তাকে বারাকাহ দান করেন।” – ইবনে মাজাহ
৬. “ভালো স্ত্রী একজন পুরুষের জন্য জান্নাতের একটি দরজা।” – হাসান আল বসরী
৭. “স্ত্রীর সাথে সদ্ব্যবহার ঈমানের একটি নিদর্শন।” – ইবনে কাইয়্যিম
৮. “স্ত্রী স্বামীর পরিপূর্ণতার অংশ এবং জীবনের শ্রেষ্ঠ বন্ধু।” – শায়খ উসামা বিন লাদেন
৯. “তুমি যখন তোমার স্ত্রীকে আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে ভালোবাসো, তখন সেটাও ইবাদত।” – শাইখ আব্দুল ফাত্তাহ
১০. “স্ত্রীর জন্য একজন সৎ স্বামী জান্নাতের দরজা খুলে দিতে পারে।” – শেখ সালেহ আল মুনাজ্জিদ
১১. “একজন নেককার স্ত্রী আল্লাহর রহমতের প্রতীক।” – ইমাম নববী
১২. “তুমি যদি এমন স্ত্রী পাও যে তোমার ঈমান বাড়াতে সাহায্য করে, তবে তুমি সৌভাগ্যবান।” – ইমাম মালিক
১৩. “বিয়ের মাধ্যমে দুই আত্মা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য একত্র হয়।” – আলী ইবনে আবু তালিব (রাঃ)
১৪. “যে স্ত্রীর চেহারা দেখে স্বামী খুশি হয়, আল্লাহ সেই স্ত্রীর জন্য সওয়াব লিখে দেন।” – আবু দাউদ
১৫. “স্ত্রী ও স্বামীর মধ্যে ভালোবাসা এবং দয়া সৃষ্টি করা আল্লাহর রহমতের নিদর্শন।” – সূরা রূম: ২১
১৬. “তারা তোমাদের পরিধান এবং তোমরাও তাদের পরিধান।” – সূরা বাকারা: ১৮৭
১৭. “স্ত্রী হল সেই বান্ধবী, যে দুনিয়া ও আখিরাতে সঙ্গী।” – ইমাম শাফেয়ী
১৮. “স্ত্রীকে সম্মান করা নবীজির সুন্নাহ।” – সহীহ হাদীস
১৯. “একজন ভালো স্ত্রী তার স্বামীর দুনিয়া ও আখিরাতের উন্নতির সহায়ক।” – ইমাম আহমাদ
২০. “যার নেককার স্ত্রী আছে, সে সম্পদশালী না হয়েও ধনী।” – ইমাম হাসান বসরী

২১. “বিয়ে ইবাদতের অর্ধেক, আর বাকিটা তাকওয়ার মাধ্যমে পূর্ণ কর।” – সহীহ হাদীস
২২. “স্ত্রীকে ভালোবাসা নবীজির সুন্নাহ এবং সুন্নাহকে ভালোবাসা ঈমানের অংশ।” – ইবনে তাইমিয়া
২৩. “ভালোবাসার শুদ্ধতম রূপ হচ্ছে যখন স্বামী-স্ত্রী আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে একত্র হয়।” – নওয়াব সিদ্দিক হাসান খান
২৪. “একজন ভালো স্ত্রী ঘরের রহমত, সন্তানের মাদ্রাসা।” – শায়খ আবু ইসহাক
২৫. “জীবনসঙ্গী যদি নেককার হয়, তবে ঘর হয়ে যায় জান্নাতের ছায়া।” – ইমাম আবু দাউদ
২৬. “স্ত্রীর জন্য দোয়া করা স্বামীর করণীয় এবং দায়িত্ব।” – ইবনে কাসির
২৭. “স্বামী যদি স্ত্রীর জন্য সময় দেয়, তা-ও আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের পথ।” – আবু হামিদ আল-গায্জালি
২৮. “একজন মুসলিম নারীর বড় গুণ হচ্ছে স্বামীর প্রতি আনুগত্য ও সহযোগিতা।” – ইবনে হাজার
২৯. “স্ত্রীর প্রতি খেয়াল রাখা মানেই নিজের ঈমান রক্ষা করা।” – হাসান আল বান্না
৩০. “ভালো স্ত্রী হলো সেই নারী, যে তোমার গোপনীয়তা রক্ষা করে ও সম্মান বাড়ায়।” – সাঈদ ইবনে জুবাইর
৩১. “আল্লাহ একজন সৎ জীবনসঙ্গীকে শিরক থেকেও বেশি ভয় করেন।” – ইমাম ইবনে কাইয়্যিম
৩২. “স্ত্রীর সঙ্গে সুন্দর আচরণ তোমাকে জান্নাতের পথে নিয়ে যেতে পারে।” – মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল ওহহাব
৩৩. “স্ত্রী শুধু ভালোবাসার নয়, বরং দ্বীনের সাথিও হতে হবে।” – আলি (রাঃ)
৩৪. “নবীজি ﷺ তার স্ত্রীদের প্রতি ছিলেন সবচেয়ে দয়ালু।” – সহীহ হাদীস
৩৫. “একজন ঈমানদার নারী তার স্বামীকে দুনিয়ায় শান্তি ও আখিরাতে সাহচর্য দেয়।” – শায়খ বিন বায
৩৬. “স্ত্রী যখন স্বামীর উপর সন্তুষ্ট থাকে, আল্লাহ তা’আলা তার গুনাহ মাফ করে দেন।” – ইবনে মাজাহ
৩৭. “বিয়ে করো তাদেরকে যারা তোমাকে আল্লাহর পথে নিয়ে যেতে সাহায্য করবে।” – শায়খ ইউসুফ কারযাভি
৩৮. “একজন সৎ জীবনসঙ্গী আল্লাহর সবচেয়ে বড় নেয়ামত।” – ইমাম ইবনে আবি শাইবা
৩৯. “জীবনসঙ্গী নির্বাচন করো তাকওয়ার ভিত্তিতে।” – শায়খ উবায়দুল্লাহ
৪০. “স্বামীর প্রতি দয়া ও মমতা একজন নারীর শ্রেষ্ঠ গুণ।” – উম্মে সালমা (রাঃ)
৪১. “তোমার স্ত্রী তোমার দায়িত্ব, তাকেও কেয়ামতে জিজ্ঞেস করা হবে।” – সহীহ বুখারী
৪২. “ভালোবাসা হালাল হলে, সেটাই ইবাদত হয়ে যায়।” – শাইখ সালেহ ফাওযান
৪৩. “যে স্ত্রী তার স্বামীর প্রতি আনুগত্য দেখায়, সে জান্নাতের অধিকারী হয়।” – সহীহ মুসলিম
৪৪. “স্ত্রীর সঙ্গে সময় কাটানোও সদকা।” – নবী মুহাম্মদ ﷺ
৪৫. “আল্লাহর ভয় যাদের মধ্যে থাকে, তাদের দাম্পত্য জীবন হয় মধুর।” – শায়খ শাওকানী
৪৬. “নেককার স্ত্রী হলে ঘর হয়ে ওঠে দুনিয়ার জান্নাত।” – শায়খ সাদী
৪৭. “স্ত্রী স্বামীর জন্য গৃহের নিরাপদ আশ্রয়।” – ইমাম তাহাবী
৪৮. “আল্লাহ একজন ভালো জীবনসঙ্গীর মাধ্যমে পরিবারে বরকত দান করেন।” – শায়খ ইবনে বায
৪৯. “সৎ জীবনসঙ্গী দ্বীনের রক্ষাকবচ।” – ইমাম শফী
৫০. “স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসা যত পবিত্র হয়, সম্পর্ক তত মজবুত হয়।” – শায়খ নাসিরুদ্দিন আলবানী
উপসংহার: জীবনসঙ্গী নিয়ে ইসলামিক উক্তি আমাদের যা শেখায়
জীবনসঙ্গী নিয়ে ইসলামিক উক্তি আমাদের দেখায়, একটি সম্পর্ক কেবলমাত্র ভালোবাসার নয় বরং আখিরাতমুখী পথচলারও অংশ। ইসলাম আমাদেরকে শিখিয়েছে কীভাবে একজন স্বামী ও স্ত্রী একে অপরের সহযোগী হয়ে জান্নাতের পথে হাঁটতে পারে।
বর্তমান সমাজে অনেকেই জীবনসঙ্গী নির্বাচনের ক্ষেত্রে বাহ্যিক বিষয়কে প্রাধান্য দেয়, কিন্তু জীবনসঙ্গী নিয়ে ইসলামিক উক্তিগুলো আমাদের মনে করিয়ে দেয়—দ্বীনদারতা ও চরিত্রই হওয়া উচিত এই সিদ্ধান্তের মূল ভিত্তি। একজন সৎ জীবনসঙ্গী যেমন জীবনের পথ সহজ করে তোলে, তেমনই আখিরাতের সফলতা অর্জনেও সহায়তা করে।
জীবনসঙ্গী নিয়ে ইসলামিক উক্তি কেবল সম্পর্কের পরামর্শ দেয় না, বরং তা আদর্শ মুসলিম জীবনের ভিত্তি তৈরি করে। তাই প্রত্যেক মুসলমানের উচিত—একজন জীবনসঙ্গী নির্বাচন করার সময় ইসলামের নির্দেশনা অনুসরণ করা এবং সেই সম্পর্ককে আল্লাহর সন্তুষ্টির মাধ্যমে টিকিয়ে রাখা।