ঝগড়া নিয়ে ইসলামিক উক্তি আমাদের জীবনে শান্তি ও সহনশীলতার গুরুত্ব স্মরণ করিয়ে দেয়। ইসলাম ধর্ম শান্তি, ধৈর্য ও ক্ষমার শিক্ষা দেয়, এবং অহেতুক ঝগড়া-বিবাদ থেকে বিরত থাকার প্রতি বিশেষভাবে গুরুত্ব আরোপ করে। জীবনে নানা সময় আমাদের সম্মুখীন হতে হয় মতবিরোধ ও উত্তেজনার, কিন্তু তখন যদি আমরা কুরআন-সুন্নাহর আলোকে চলি, তাহলে সহজেই সেই উত্তপ্ত পরিস্থিতিকে শান্ত করে তোলা সম্ভব। তাই ঝগড়া নিয়ে ইসলামিক উক্তি গুলো আমাদেরকে শুধু সাবধান করে না, বরং নৈতিক ও আধ্যাত্মিকভাবে গড়ে তোলে।
আধুনিক সমাজে মানুষের মধ্যে ধৈর্য ও সহনশীলতা হারিয়ে যাচ্ছে, যার ফলে পারিবারিক, সামাজিক ও ব্যক্তিগত জীবনে দ্বন্দ্ব-কলহ বেড়ে চলেছে। অথচ ইসলাম ধর্ম বারবার ঝগড়া থেকে বিরত থাকতে এবং সমস্যার সমাধান আলোচনার মাধ্যমে করার কথা বলেছে। ঝগড়া নিয়ে ইসলামিক বিখ্যাত উক্তিগুলো আমাদের শিখায় কিভাবে নম্রতা ও শান্তির মাধ্যমে সৃষ্ট সম্পর্কগুলো টিকিয়ে রাখা যায়।
ঝগড়া নিয়ে ইসলামিক উক্তি
তাহলে দেখে নেয়া যাক বাছাইকৃত সেরা ঝগড়া নিয়ে ইসলামিক উক্তি, যা জীবন গঠনে এবং ফেসবুক ক্যাপশন হিসেবেও কাজে আসবে।
জনপ্রিয় ও চমৎকার ঝগড়া নিয়ে ইসলামিক উক্তি (১-২০):
-
“সবচেয়ে শক্তিশালী ব্যক্তি সে, যে রাগের সময় নিজেকে সংযত রাখতে পারে।” – হাদীস, সহীহ বুখারী
-
“মুসলিম সেই ব্যক্তি, যার হাত ও জিহ্বা থেকে অন্য মুসলিম নিরাপদ থাকে।” – নবী মুহাম্মদ (ﷺ)
-
“ঝগড়া এড়িয়ে চলাই প্রকৃত মুসলিমের বৈশিষ্ট্য।” – ইমাম গাজ্জালি
-
“যে ক্ষমা করে, সে আল্লাহর কাছে সম্মানিত হয়।” – হাদীস, সহীহ মুসলিম
-
“রাগ শয়তানের আগুন; যে রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, সে ইমানদার।” – হযরত আলী (রাঃ)
-
“ঝগড়া বাড়ালে শয়তান খুশি হয়, শান্তি প্রতিষ্ঠা করলে আল্লাহ খুশি হন।” – নবী মুহাম্মদ (ﷺ)
-
“অহংকার ও রাগ মানুষের ধ্বংসের কারণ।” – ইমাম হাসান আল বসরি (রহঃ)
-
“যে তর্কে জিতে, কিন্তু সম্পর্ক হারায়, সে কিছুই জেতে না।” – হযরত উমর (রাঃ)
-
“মুমিনরা পরস্পরের ভাই, তাই ঝগড়া নয় বরং মিল-মিশ করো।” – আল-কুরআন (সূরা হুজরাত: ১০)
-
“শান্তি প্রতিষ্ঠা করা কল্যাণ, আর ঝগড়া সৃষ্টি করা ধ্বংস।” – নবী মুহাম্মদ (ﷺ)
-
“যে গীবত করে বা ঝগড়া করে, সে রোজার সাওয়াব থেকে বঞ্চিত হয়।” – হাদীস, সহীহ বুখারী
-
“তর্কে জিতে অন্যকে ছোট করা ইসলাম সমর্থন করে না।” – ইমাম শাফি (রহঃ)
-
“রাগ মুহূর্তের পাগলামী, যা সবকিছু নষ্ট করে দিতে পারে।” – হযরত ওসমান (রাঃ)
-
“সবচেয়ে প্রিয় সেই ব্যক্তি, যে শান্তির জন্য ত্যাগ করতে পারে।” – হাদীস, তিরমিযি
-
“ইসলাম বিনয় ও নম্রতার শিক্ষা দেয়, ঝগড়া নয়।” – ইমাম নববী (রহঃ)
-
“ঝগড়া করে যে সম্পর্ক নষ্ট করে, সে ইসলামের সৌন্দর্যকে অপমান করে।” – হযরত আবু বকর (রাঃ)
-
“ঝগড়া মানুষকে ক্ষুদ্র করে, ক্ষমা মানুষকে মহান করে।” – হযরত আলী (রাঃ)
-
“ঝগড়া থেকে বিরত থাকা নবীর সুন্নাহ।” – নবী মুহাম্মদ (ﷺ)
-
“যে দুনিয়ায় শান্তি আনতে চায়, সে ঝগড়া নয়, সমঝোতা করে।” – হাদীস, মিশকাত
-
“ঝগড়া ছাড়া জীবনই প্রকৃত ইসলামী জীবন।” – ইমাম আবু হানিফা (রহঃ)

আরও অনুপ্রেরণামূলক ঝগড়া নিয়ে ইসলামিক উক্তি (২১-৫৫):
-
“দ্বন্দ্ব নয়, আলোচনার মধ্যেই সমাধান খুঁজে নাও।” – হযরত হুসাইন (রাঃ)
-
“যে রাগকে দমন করে, তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর প্রস্তুত আছে।” – হাদীস, তিরমিযি
-
“তর্ক না করাই জ্ঞানের পরিচয়।” – ইমাম মালিক (রহঃ)
-
“তুমি যদি চাও আল্লাহ তোমার প্রতি দয়া করুন, তবে তুমি অন্যের প্রতি দয়া করো।” – নবী মুহাম্মদ (ﷺ)
-
“ঝগড়া এড়িয়ে চলা ইবাদতের অংশ।” – হাদীস, আবু দাউদ
-
“নরম ভাষা ঝগড়া কমায়, কঠোরতা তা বাড়ায়।” – ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহঃ)
-
“মুমিনদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করো না, তা শয়তানের কাজ।” – কুরআন, সূরা আনফাল
-
“আল্লাহ সেই ব্যক্তিকে ভালোবাসেন, যে শান্তির বার্তা নিয়ে আসে।” – নবী মুহাম্মদ (ﷺ)
-
“নিজের ভুল স্বীকার করাই সাহসের পরিচয়, ঝগড়া নয়।” – হযরত উবায়দা (রাঃ)
-
“পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাই সম্পর্কের ভিত্তি।” – ইমাম সাদি (রহঃ)
-
“ঝগড়া থেকে যে দূরে থাকে, সে আল্লাহর রহমতের অধিকারী।” – হাদীস, সহীহ মুসলিম
-
“তর্ক করলে শয়তান উৎসাহিত হয়।” – হযরত সাদ (রাঃ)
-
“ঝগড়া মানুষের হৃদয় দূর করে দেয়।” – ইমাম তৈমিয়া (রহঃ)
-
“যে চুপ থাকে, সে নিরাপদে থাকে।” – নবী মুহাম্মদ (ﷺ)
-
“ঝগড়ার চেয়ে চুপ থাকা উত্তম।” – হযরত সালমান ফারসি (রাঃ)
-
“যেখানে ঝগড়া নেই, সেখানে বরকত নেমে আসে।” – ইমাম কুরতুবি (রহঃ)
-
“তোমার কথায় যদি অন্যকে কষ্ট দেয়, তবে সেটি তোমার পরাজয়।” – হাদীস, মুসনাদ আহমদ
-
“ঝগড়া পরিত্যাগ করো, সম্মান লাভ করো।” – ইমাম রাযি (রহঃ)
-
“ঈমানের পূর্ণতা আসে রাগ দমন ও ক্ষমার মাধ্যমে।” – হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ)
-
“ঝগড়ার আগুন নিভাতে প্রথম যে এগোয়, সে আল্লাহর প্রিয় বান্দা।” – নবী মুহাম্মদ (ﷺ)
-
“তর্ক এড়িয়ে চলা নবীর আদর্শ।” – হাদীস, মুসনাদ দারেমি
-
“ঝগড়ার শেষে সম্পর্ক ভেঙে যায়, ক্ষমার শেষে সম্পর্ক গড়ে ওঠে।” – ইমাম শাতিবি (রহঃ)
-
“বড় হও মানে সম্পর্ক রক্ষা করো, জেদ নয়।” – হযরত আবু উবাইদা (রাঃ)
-
“তুমি যদি ভুলেও ঝগড়া করো, তবে আগে ক্ষমা চাও।” – ইমাম তিরমিযি (রহঃ)
-
“যেখানে রাগ নেই, সেখানে ঝগড়া নেই।” – ইমাম শাফি (রহঃ)
-
“ইসলামে অহেতুক তর্ককে ঘৃণা করা হয়।” – হযরত যয়নুল আবেদিন (রাঃ)
-
“নম্রতা একজন মুসলিমের গহনা।” – নবী মুহাম্মদ (ﷺ)
-
“ঝগড়া দুনিয়ার ক্ষতি ও আখিরাতের বিপদ।” – হযরত উবাই (রাঃ)
-
“পরস্পরকে ক্ষমা করা ইসলামের পরিচয়।” – কুরআন, সূরা নূর
-
“ঝগড়া পরিত্যাগ করলেই শান্তি আসে।” – নবী মুহাম্মদ (ﷺ)
-
“তর্ক না করে আল্লাহর উপর ভরসা করো।” – ইমাম আহমাদ (রহঃ)
-
“মুসলিম সমাজে ঝগড়া বিভাজন আনে, সংযম ঐক্য আনে।” – হযরত তালহা (রাঃ)
-
“ঝগড়া কমাও, বরকত বাড়াও।” – ইমাম শাফি (রহঃ)
-
“যে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান চায়, সে প্রকৃত মুসলিম।” – নবী মুহাম্মদ (ﷺ)
-
“দ্বন্দ্ব না বাড়িয়ে দোয়া করো, আল্লাহ পথ দেখাবেন।” – হাদীস, তাবারানি
উপসংহার: ঝগড়া নিয়ে ইসলামিক উক্তি ও আমাদের জীবনে এদের বাস্তব প্রয়োগ
জীবনের প্রতিটি স্তরে ঝগড়া নিয়ে ইসলামিক উক্তি আমাদেরকে ধৈর্যশীল ও সচেতন করে তোলে। একজন প্রকৃত মুসলিম কখনো ঝগড়া-বিবাদে জড়াতে চায় না, বরং সে শান্তি ও সহনশীলতার পথ বেছে নেয়। ঝগড়া নিয়ে ইসলামিক বিখ্যাত উক্তিগুলো আমাদের শেখায়—তর্কে নয়, সমঝোতায় থাকে বরকত।
ঝগড়া নিয়ে ইসলামিক উক্তি কেবল পাঠ্য নয়, এগুলো বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করলেই আমরা প্রকৃত উপকার পাবো। পারিবারিক সম্পর্ক হোক বা সামাজিক জীবন, ঝগড়া নয়, বরং ক্ষমা ও আলোচনার মাধ্যমে আমরা সুস্থ সমাজ গড়তে পারি।
পরিশেষে, ঝগড়া নিয়ে ইসলামিক উক্তি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, রাগ-তর্ক শুধু ক্ষতিই করে না, বরং তা আখিরাতের জন্য বিপজ্জনক। একজন মুসলমানের উচিত নিজেকে সংযত রাখা, দ্বন্দ্ব এড়িয়ে চলা এবং সকলের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখা।