টলস্টয়ের উক্তি আমাদের জীবনের প্রতিটি বাঁকে নতুন করে ভাবতে শেখায়। সাহিত্য, নৈতিকতা ও দর্শনের জগতে লিও টলস্টয় ছিলেন এমন এক আলো, যাঁর চিন্তা-ভাবনা আজও কোটি মানুষের অন্তর ছুঁয়ে যায়। বিশেষত, টলস্টয়ের উক্তি এমন কিছু গভীর জীবনদর্শনের কথা বলে যা কেবল বইয়ের পাতায় নয়, জীবনের প্রতিটি অধ্যায়ে পথ দেখায়।
টলস্টয়ের উক্তি অনেক সময় আমাদের ভেতরের মানবতাকে জাগিয়ে তোলে। তাঁর লেখাগুলো যেমন বাস্তববাদী, তেমনই তাঁর বাণীগুলো আশ্চর্যরকম হৃদয়গ্রাহী। এমনকি ইসলামিক ভাবনার সাথে টলস্টয়ের দর্শনের অনেক মিল পাওয়া যায়, যেমন আত্মসংযম, শান্তিপূর্ণ জীবন, সত্য অনুসন্ধান ইত্যাদি। তাই টলস্টয়ের বিখ্যাত উক্তিগুলো শুধুই রাশিয়ান সাহিত্য নয়, বরং বিশ্বজুড়ে সকল ধর্ম-বর্ণের মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য ও অনুপ্রেরণামূলক।
টলস্টয়ের উক্তি
তাহলে দেখে নেয়া যাক বাছাইকৃত সেরা টলস্টয়ের উক্তি, যা জীবন গঠনে এবং ফেসবুক ক্যাপশন হিসেবেও কাজে আসবে।
-
“সবাই পৃথিবী বদলাতে চায়, কিন্তু কেউ নিজেকে বদলাতে চায় না।” – লিও টলস্টয়
-
“যেখানে প্রেম আছে, সেখানে ঈশ্বর আছেন।” – লিও টলস্টয়
-
“জীবনের অর্থ হচ্ছে নিজেকে খুঁজে পাওয়া নয়, বরং নিজেকে গড়ে তোলা।” – লিও টলস্টয়
-
“ক্ষমা করাই হচ্ছে প্রকৃত শক্তি।” – লিও টলস্টয়
-
“যা কিছু সত্য, তাই সুন্দর।” – লিও টলস্টয়
-
“অহংকার মানুষের সবচেয়ে বড় শত্রু।” – লিও টলস্টয়
-
“সুখ হচ্ছে তখনই যখন তুমি নিজেকে অন্যের জন্য উপকারী মনে করো।” – লিও টলস্টয়
-
“যতক্ষণ তুমি নিজের অন্তরকে শুদ্ধ করতে পারো না, ততক্ষণ তুমি অন্যদের পরিবর্তন করতে পারবে না।” – লিও টলস্টয়
-
“মানবতা ছাড়া ধর্ম বৃথা।” – লিও টলস্টয়
-
“যে সত্য বলার সাহস রাখে, সেই প্রকৃত মুক্ত মানুষ।” – লিও টলস্টয়
-
“প্রেমের শক্তি ঘৃণার চেয়ে অনেক বড়।” – লিও টলস্টয়
-
“শান্তি নিজে থেকে আসে না, তাকে সৃষ্টি করতে হয়।” – লিও টলস্টয়
-
“ধন নয়, জ্ঞানই মানুষের প্রকৃত শক্তি।” – লিও টলস্টয়
-
“তুমি যত বড় হবে, তত নম্র হওয়া প্রয়োজন।” – লিও টলস্টয়
-
“মানুষ যত গভীরভাবে চিন্তা করে, তত সে দয়ালু হয়ে ওঠে।” – লিও টলস্টয়
-
“জীবনের গন্তব্য নয়, যাত্রাটাই গুরুত্বপূর্ণ।” – লিও টলস্টয়
-
“ভবিষ্যৎ নয়, বর্তমানেই কাজ করো।” – লিও টলস্টয়
-
“ধর্ম মানে কেবল আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং আত্মিক উন্নয়ন।” – লিও টলস্টয়
-
“ভালোবাসাই একমাত্র পথ যা মানুষকে সত্যিকারে মুক্তি দেয়।” – লিও টলস্টয়
-
“জীবনে সফলতা মানে নিজের আত্মাকে চিনে নেওয়া।” – লিও টলস্টয়

অন্যান্য অনুপ্রেরণামূলক উক্তি: ইসলামি চিন্তাবিদ ও মনীষীদের দৃষ্টিভঙ্গি
-
“তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম সেই ব্যক্তি, যে তার স্ত্রীর প্রতি উত্তম আচরণ করে।” – হজরত মুহাম্মদ (ﷺ)
-
“দুনিয়া একজন কারাবন্দীর মতো মুমিনের জন্য, আর কাফেরের জন্য স্বর্গ।” – হজরত মুহাম্মদ (ﷺ)
-
“সত্যবাদিতা মানুষকে ন্যায়ের পথে নিয়ে যায়, এবং ন্যায় মানুষকে জান্নাতে নিয়ে যায়।” – হজরত মুহাম্মদ (ﷺ)
-
“তুমি যদি মানুষের কৃতজ্ঞতা আশা করো, তাহলে তুমি ব্যর্থ হবে; আল্লাহর সন্তুষ্টিই যথেষ্ট।” – ইমাম আল-গাযালী
-
“সবচেয়ে বুদ্ধিমান সেই, যে মৃত্যুর কথা বেশি স্মরণ করে এবং তার জন্য প্রস্তুতি নেয়।” – হজরত মুহাম্মদ (ﷺ)
-
“তোমার জিহ্বাকে নিয়ন্ত্রণে রাখো, কারণ অনেক বিপদ এর মাধ্যমেই ঘটে।” – হজরত আলী (রাঃ)
-
“আমার জানা নেই—এই স্বীকারোক্তি জ্ঞানের অর্ধেক।” – ইমাম শাফি (রহঃ)
-
“সুন্দর চরিত্রই একজন মুমিনের শ্রেষ্ঠ গুণ।” – হজরত মুহাম্মদ (ﷺ)
-
“আল্লাহর ভয় অন্তরে থাকলে, সে মানুষ কখনো অন্যায়ে লিপ্ত হতে পারে না।” – হযরত ওমর (রাঃ)
-
“তুমি যা করতে পারো না, সে বিষয়ে চিন্তা না করে যা পারো তাতে মনোযোগ দাও।” – ইমাম মালিক (রহঃ)
-
“আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বিশ্বাস থাকলে, সব কাজই সহজ হয়ে যায়।” – শেখ সাদী
-
“দুনিয়ার প্রতি আগ্রহ কম থাকলেই মানুষ হৃদয়ের প্রশান্তি পায়।” – ইবনে তাইমিয়া
-
“আল্লাহ কাউকে তার সাধ্যের বাইরে দায়িত্ব দেন না।” – কোরআন ২:২৮৬
-
“ধৈর্য হচ্ছে সফলতার চাবিকাঠি।” – ইবনে কাইয়িম
-
“সততা হলো ইমানের অঙ্গ।” – হজরত মুহাম্মদ (ﷺ)
-
“দুনিয়া ধোঁকা, তাই এতে গর্ব করার কিছু নেই।” – হজরত ওসমান (রাঃ)
-
“নিরবতা জ্ঞানের একটি গুণ।” – হজরত আলী (রাঃ)
-
“দরিদ্র নয়, বরং আত্মিক দারিদ্র্যই প্রকৃত দুঃখ।” – শেখ সাদী
-
“যে নিজের দোষ দেখবে, সে কখনও অহংকারী হবে না।” – ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল
-
“সঠিক পথের সন্ধান যারা করে, আল্লাহ তাদের জন্য পথ সহজ করে দেন।” – কোরআন ২৯:৬৯
-
“তুমি যদি আল্লাহর সন্তুষ্টি চাও, তাহলে মানুষের অসন্তুষ্টির ভয় করোনা।” – হজরত আলী (রাঃ)
-
“ক্ষমা করা শক্তির পরিচায়ক, দুর্বলতা নয়।” – ইমাম গাজালি
-
“পার্থিব জীবন ধোঁকার খেলা, একমাত্র আখিরাতেই প্রকৃত সফলতা।” – কোরআন ৫৭:২০
-
“একটি হাসি একটি সদকা।” – হজরত মুহাম্মদ (ﷺ)
-
“কোনো কাজ ছোট নয়, যদি তা সৎ উদ্দেশ্যে করা হয়।” – ইমাম শাফি (রহঃ)
-
“অল্পে সন্তুষ্ট থাকাই প্রকৃত ধনী হওয়া।” – হজরত মুহাম্মদ (ﷺ)
-
“তুমি যদি মানুষকে বোঝাতে ব্যর্থ হও, তবে নীরব থাকো।” – ইবনে কাইয়িম
-
“আল্লাহর কাছে ফিরে যাওয়ার প্রস্তুতি নাও, কারণ এই জীবন ক্ষণস্থায়ী।” – হজরত ওমর (রাঃ)
-
“সাহস নয়, অন্তরের পরিশুদ্ধতাই হচ্ছে সাহসিকতার মূল।” – হজরত আলী (রাঃ)
-
“তুমি যা নিজে জন্য চাও না, তা অন্যের জন্যও চেও না।” – হজরত মুহাম্মদ (ﷺ)
-
“যে নিজেকে চেনে, সে তার রবকে চিনতে পারে।” – হজরত আলী (রাঃ)
উপসংহার: টলস্টয়ের উক্তি ও আমাদের জীবনের প্রাসঙ্গিকতা
টলস্টয়ের উক্তি শুধুমাত্র একজন লেখকের দার্শনিক চিন্তার বহিঃপ্রকাশ নয়, বরং তা আমাদের জীবনচর্চায় অনুপ্রেরণা যোগায়। বিশেষত আত্মশুদ্ধি, প্রেম, ন্যায় ও মানবতার যে চেতনা তিনি তুলে ধরেছেন, তা ইসলামিক দৃষ্টিভঙ্গির সাথেও দারুণভাবে মিল খুঁজে পায়। তাই টলস্টয়ের উক্তি কেবল সাহিত্যের জন্য নয়, জীবনের দিকনির্দেশনার ক্ষেত্রেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বর্তমান সময়ে টলস্টয়ের উক্তি অনেকেই ফেসবুক কিংবা সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করে থাকেন, কারণ তার উক্তিগুলো মানুষের হৃদয়ে দাগ কাটে। তাঁর জীবনদর্শন এবং সত্য অনুসন্ধানের বার্তা একাধারে সময়োপযোগী এবং চিরন্তন। টলস্টয়ের বিখ্যাত উক্তিগুলো যেমন আত্মোপলব্ধির পথ খুলে দেয়, তেমনি সমাজ-সংস্কারের একটি চিত্রও তুলে ধরে।
পরিশেষে বলা যায়, টলস্টয়ের উক্তি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে জীবন শুধুমাত্র বস্তুগত নয়, বরং নৈতিকতাই জীবনের প্রকৃত মাপকাঠি। তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি ও বাণীগুলো যারা হৃদয় দিয়ে অনুধাবন করেন, তারা জীবনকে আরও গভীরভাবে বোঝার পথ খুঁজে পান। তাই জীবনের যেকোনো পর্যায়ে টলস্টয়ের মত মনীষীদের বাণী আমাদের সহায় হতে পারে।