পরকীয়া নিয়ে ইসলামিক উক্তি সমাজে চেতনার আলো জ্বালাতে পারে। পরকীয়া শুধু একটি ব্যক্তিগত পাপ নয়, বরং এটি পরিবার, সমাজ ও আত্মার ওপর গভীর প্রভাব ফেলে। ইসলাম ধর্ম পরকীয়াকে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করেছে এবং একে জঘন্য অপরাধ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। পরকীয়া নিয়ে ইসলামিক উক্তি আমাদের মনে করিয়ে দেয়—বিশ্বাসঘাতকতা কেবল একজন মানুষকে নয়, গোটা সম্পর্কের কাঠামোকেই ধ্বংস করে দিতে পারে।
পরকীয়া নিয়ে ইসলামিক উক্তির গুরুত্ব এই জায়গাতেই—এগুলো মানুষকে সচেতন করে, ভয় দেখায় না, বরং সঠিক পথে ফিরে আসতে উৎসাহিত করে। এই উক্তিগুলো আমাদের শেখায়, একজন মুসলিম হিসেবে আমাদের কীভাবে নিজের প্রবৃত্তি ও ইচ্ছার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। কারণ, পরকীয়া শুধু দুনিয়ার ক্ষতি নয়, আখিরাতের শাস্তিও বয়ে আনে।
আজকের সমাজে যখন অনেকে “স্বাধীনতা” ও “ব্যক্তিগত পছন্দ” এর আড়ালে অনৈতিক সম্পর্ককে স্বাভাবিক বানাতে চায়, তখন পরকীয়া নিয়ে ইসলামিক বিখ্যাত উক্তিগুলো আমাদের অনেক কাজে লাগে। এই উক্তিগুলো শুধু শাস্তির বার্তা নয়, বরং আত্মশুদ্ধির পথও দেখায়।
পরকীয়া নিয়ে ইসলামিক উক্তি
তাহলে দেখে নেয়া যাক বাছাইকৃত সেরা পরকীয়া নিয়ে ইসলামিক উক্তি, যা জীবন গঠনে এবং ফেসবুক ক্যাপশন হিসেবেও কাজে আসবে।
১. “তোমাদের মধ্যে যে ব্যভিচারের কাছে যায়, সে যেন জানে—আল্লাহ তা’আলা তাকে এক কঠিন শাস্তির মুখোমুখি করবেন।” — হযরত মুহাম্মদ (ﷺ)
২. “ব্যভিচার এমন এক পাপ, যার কোনো লুকানো রূপ নেই, কারণ তা নিজের মধ্যেই অপমান বয়ে আনে।” — হযরত ওমর (রাঃ)
৩. “পরকীয়া মুমিনের চরিত্র নয়।” — সহীহ বুখারী
৪. “তোমরা ব্যভিচারের ধারে-কাছেও যেয়ো না। নিশ্চয়ই এটা অশ্লীল কাজ এবং মন্দ পথ।” — কুরআন, সূরা আল-ইসরা (১৭:৩২)
৫. “যে স্ত্রী তার স্বামীকে ঠকায়, সে জান্নাতের সুগন্ধও পাবে না।” — সহীহ মুসলিম
৬. “বিশ্বাসঘাতকতা থেকে বড় পাপ আর নেই।” — ইমাম গাজ্জালি (রহঃ)
৭. “যে নারী তার স্বামী ছাড়া অন্য কারও দিকে আকৃষ্ট হয়, সে যেন নিজের ঈমান খেয়াল করে।” — হযরত আয়েশা (রাঃ)
৮. “যে ব্যক্তি পরকীয়ায় লিপ্ত, তার হৃদয়ে ঈমানের আলো ম্লান হয়ে যায়।” — ইবনে কায়্যিম (রহঃ)
৯. “পরকীয়া এমন এক আগুন, যা দুনিয়াকে পুড়িয়ে দেয়, আর আখিরাতের জন্য প্রস্তুত করে জাহান্নামের শিখা।” — ইমাম মালেক
১০. “যে নারী নিজের স্বামীর অজান্তে অন্য পুরুষের সঙ্গে সম্পর্ক রাখে, তার নাম ফেরেশতা প্রতিদিন মুছে দেয় আল্লাহর কাছে।” — তাফসীর ইবনে কাসীর
১১. “পরকীয়া করে যে, সে আত্মঘাতী পথ বেছে নেয়।” — হযরত আলী (রাঃ)
১২. “মুসলমান কখনো ব্যভিচারী হতে পারে না, যদি তার হৃদয়ে ঈমান থাকে।” — সহীহ মুসলিম
১৩. “পরকীয়া শুধু দেহের পাপ নয়, আত্মারও অধঃপতন।” — শেখ সাদী
১৪. “বিবাহের বাইরে সম্পর্ক হলো ইসলাম থেকে এক ধাপ সরে যাওয়া।” — ইবনে তাইমিয়া
১৫. “পরকীয়া নরকের দরজা খুলে দেয়।” — ইমাম আবু হানিফা
১৬. “যে তার স্ত্রীর প্রতি বিশ্বস্ত নয়, সে আল্লাহর আমানত অপমান করেছে।” — ইমাম শাফেয়ী (রহঃ)
১৭. “আল্লাহ সেই বান্দাকে ভালোবাসেন, যে নিজের চোখকে হিফাযত করে পরকীয়ার দিক থেকে।” — সহীহ হাদীস
১৮. “একজন নারীর সবচেয়ে বড় ইবাদত হলো, সে তার স্বামী ছাড়া অন্য কারো দিকে না তাকায়।” — হযরত ফাতিমা (রাঃ)
১৯. “পরকীয়া একজন মুমিনের জীবনে সবচেয়ে বড় বিপর্যয়।” — ইমাম বুখারী
২০. “পরকীয়া হলো হৃদয়ের মৃত্যু।” — হযরত হাসান বসরি (রহঃ)

২১. “যে ব্যক্তি অন্যের স্ত্রীকে কুপ্রস্তাব দেয়, তার জন্য জাহান্নাম অবধারিত।” — তাফসিরে তাবারি
২২. “পরকীয়া বন্ধুত্ব দিয়ে শুরু হয়, কিন্তু শেষ হয় পাপ দিয়ে।” — ইবনে রজব (রহঃ)
২৩. “শয়তানের সবচেয়ে বড় ফাঁদ হলো পরকীয়া।” — হযরত উসমান (রাঃ)
২৪. “পরকীয়া যখন স্বাভাবিক হয়, তখন সমাজ ধ্বংস হয়।” — ইমাম সুয়ুতি
২৫. “পরকীয়া মানেই অশান্তি, কষ্ট এবং আল্লাহর গজব।” — হাফেজ ইবনে হাজার
২৬. “পরকীয়া দুনিয়াতেও ধ্বংস ডাকে, আখিরাতেও।” — হযরত ইব্রাহিম (আঃ)
২৭. “তুমি যদি আল্লাহকে ভয় করো, তবে পরকীয়া কখনোই করবে না।” — উবাই ইবনে কাব (রাঃ)
২৮. “যে তার বিবাহিত জীবনকে সম্মান দেয় না, সে আল্লাহর নেয়ামতকে অস্বীকার করে।” — ইমাম নওয়াবী
২৯. “পরকীয়া জীবনের শান্তি কেড়ে নেয়।” — শায়খ আব্দুল্লাহ বিন বায
৩০. “নজর নামাহর শুরু, তারপর শয়তানের খেল।” — হযরত সালমান ফারসী (রাঃ)
৩১. “যা গোপনে করতে হয়, তা কখনোই হালাল হতে পারে না।” — উম্মে সালামা (রাঃ)
৩২. “পরকীয়া করে যে, সে দুনিয়াতে লজ্জিত হবে এবং আখিরাতে দণ্ডিত।” — ইমাম নাসাঈ
৩৩. “আল্লাহ মাফ করেন, কিন্তু পরকীয়ার জন্য শর্ত হচ্ছে, তা সম্পূর্ণভাবে ত্যাগ করা।” — ইবনে আব্বাস (রাঃ)
৩৪. “যে নারী বা পুরুষ পরকীয়া করে, তারা নিজেদের ইজ্জতেরই শত্রু।” — ইবনে কাসীর
৩৫. “পরকীয়া হলো দুনিয়ার মিষ্টি বিষ।” — ইমাম তিরমিযী
৩৬. “তোমার চোখকে হেফাজত করো, যাতে মন না হারায় পথ।” — সহীহ হাদীস
৩৭. “পরকীয়া মানুষকে পশুত্বে নামিয়ে আনে।” — হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ)
৩৮. “প্রথম নজর মাফ, কিন্তু দ্বিতীয়টা পাপ।” — রাসূলুল্লাহ (ﷺ)
৩৯. “যে স্ত্রী অন্য পুরুষের দিকে আকৃষ্ট হয়, সে জান্নাতের হকদার নয়।” — সহীহ হাদীস
৪০. “আল্লাহর ভয়ই হলো পরকীয়ার আসল প্রতিষেধক।” — ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল
৪১. “যে নারী তার স্বামী ছাড়া অন্য কারো সাথে গোপনে কথা বলে, তার ঈমান দুর্বল হয়ে যায়।” — সহীহ হাদীস
৪২. “যে ব্যক্তি তার বিবাহিত জীবনকে গুরুত্ব দেয় না, সে মূলত নিজের ঈমানের সঙ্গে প্রতারণা করে।” — হযরত ওয়াসিলা (রাঃ)
৪৩. “পরকীয়া মানেই পবিত্রতার বিপরীত পথ।” — ইমাম কুরতুবী
৪৪. “পরকীয়া হলো আখিরাতের সর্বনাশের চাবিকাঠি।” — ইবনে জাওযী
৪৫. “যে ব্যক্তি পরকীয়া করে, তার জীবন থেকে বরকত চলে যায়।” — শায়খ সাদ আল গামদি
৪৬. “পরকীয়া না থাকলে সমাজ হতো শান্তিময়।” — ইমাম যাহাবী
৪৭. “তুমি যা অন্যের সঙ্গে করো, তা একদিন তোমার সঙ্গেও হবে।” — ইসলামী প্রবাদ
৪৮. “যে পরকীয়া থেকে ফিরে আসে, সে আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয়।” — হাদীস
৪৯. “যে তার স্ত্রীকে ঠকায়, সে নিজেকেই ধ্বংস করে।” — হযরত ইবনে ওমর (রাঃ)
৫০. “পরকীয়া মনকে কলুষিত করে, আত্মাকে মলিন করে দেয়।” — ইমাম রাযী
উপসংহার: পরকীয়া নিয়ে ইসলামিক উক্তি থেকে আমরা যা শিখলাম
পরকীয়া নিয়ে ইসলামিক উক্তি আমাদের জীবনের জন্য এক শক্তিশালী সতর্কবার্তা। এই উক্তিগুলোর মধ্যে রয়েছে আত্মবিশ্লেষণের উপাদান, আছে সম্পর্কের প্রতি দায়িত্ববোধের আহ্বান। একজন মুসলিমের জীবন যেন এই পথভ্রষ্টতা থেকে মুক্ত থাকে, সে বিষয়েই আমাদের সচেতন হতে হবে।
পরকীয়া নিয়ে ইসলামিক উক্তিগুলো কেবল ধর্মীয় দিক নির্দেশনা নয়, বরং জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে নৈতিকতার বুনিয়াদ তৈরি করে। যখন কেউ এই ধরনের পাপে জড়ায়, তখন শুধু এক ব্যক্তি নয়, ভেঙে পড়ে গোটা পরিবার ও সমাজ। এই কারণেই ইসলাম এতটা কঠোরভাবে এর বিপক্ষে কথা বলেছে।
সবশেষে বলতেই হয়, পরকীয়া নিয়ে ইসলামিক বিখ্যাত উক্তিগুলো আমাদের আলোর পথ দেখায়। যখন সমাজ অন্ধকারে হাঁটছে, তখন এই সত্যগুলো আমাদের মনে করিয়ে দেয়—আল্লাহর ভয়ই হলো আসল আত্মনিয়ন্ত্রণের উৎস। ঈমান টিকিয়ে রাখতে হলে, চরিত্রকে পবিত্র রাখতে হবে—পরকীয়ার ধারে-কাছেও যাওয়া যাবে না।