১৫ দিন পর পর মাসিক হওয়ার কারণ কি? জানুন এর পেছনের সঠিক কারণগুলো

- আপডেট সময় : ০৫:৫৫:০৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৫ মে ২০২৫ ৪১ বার পড়া হয়েছে
মাসিক বা পিরিয়ডের চক্র যে নিয়মিতভাবে আসে, তা প্রতিটি নারীই আশা করেন। তবে কখনো কখনো মাসিক চক্রে অস্বাভাবিকতা দেখা দেয়, যেমন ১৫ দিন পর পর মাসিক হওয়া। এটি অনেকের জন্য চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তবে এই সমস্যার পেছনে একাধিক কারণ থাকতে পারে। আজকের এই আর্টিকেলে আমরা জানব ১৫ দিন পর পর মাসিক হওয়ার কারণ কি এবং কীভাবে এটি মোকাবিলা করা যায়।
মাসিক চক্রের স্বাভাবিক সময়কাল
স্বাভাবিকভাবে মাসিক চক্র ২১ দিন থেকে ৩৫ দিনের মধ্যে থাকে। সাধারণত, একজন নারীর মাসিক প্রতি 28 দিন পর পর আসে, তবে কিছুটা তারতম্য হতে পারে। যদি মাসিক চক্র ১৫ দিন পর পর হয়, তবে এটি অস্বাভাবিক মনে হতে পারে। মাসিকের অস্বাভাবিকতা অনেক কারণেই হতে পারে, এবং এটি একাধিক স্বাস্থ্য সমস্যা নির্দেশ করতে পারে।
১৫ দিন পর পর মাসিক হওয়ার কারণসমূহ
১. হরমোনাল অসামঞ্জস্যতা
মাসিক চক্রের মূল নিয়ন্ত্রক হরমোন। এই হরমোনের কোনো অসামঞ্জস্যতা ঘটলে, মাসিকের চক্র পরিবর্তিত হতে পারে। পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম (PCOS) এর মত রোগে এই ধরনের অসামঞ্জস্য দেখা দিতে পারে। এতে, নারীর শরীরে প্রয়োজনীয় হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায় এবং মাসিক একে অপরকে ঘিরে চলে আসে।
২. গর্ভাবস্থা সম্পর্কিত কারণ
গর্ভাবস্থায় মাসিক বন্ধ হয়ে যায়। তবে কখনো কখনো গর্ভাবস্থা শুরুর সময়ে হালকা রক্তস্রাব হতে পারে, যা কিছুটা মাসিকের মতো মনে হতে পারে। এছাড়া, গর্ভপাতের পরেও অনিয়মিত মাসিক হতে পারে।
৩. এন্ডোমেট্রিওসিস
এন্ডোমেট্রিওসিস একটি রোগ যেখানে জরায়ুর ভেতরের টিস্যু বাইরে বেড়ে যায়। এই রোগে মাসিকের সময় প্রচণ্ড ব্যথা হয় এবং মাসিক চক্র অস্বাভাবিক হয়ে যায়। কখনো কখনো এটি ১৫ দিন পর পর মাসিক হওয়ার কারণ হতে পারে।
৪. মানসিক চাপ ও উদ্বেগ
মানসিক চাপের কারণে হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে, যার ফলে মাসিক চক্র পরিবর্তিত হতে পারে। জীবনের চাপ বা উদ্বেগজনক পরিস্থিতি মাসিকের অস্বাভাবিকতা ঘটাতে পারে।
৫. অতিরিক্ত ব্যায়াম বা খাদ্যাভ্যাসের সমস্যা
অতিরিক্ত ব্যায়াম বা তীব্র ডায়েটিংয়ের কারণে শরীরে পুষ্টির অভাব হতে পারে, যা মাসিক চক্রকে প্রভাবিত করতে পারে। এর ফলে মাসিক ১৫ দিন পর পর আসতে পারে।
১৫ দিন পর পর মাসিক হওয়া কীভাবে চিকিৎসা করা যায়?
যদি আপনি অনুভব করেন যে আপনার মাসিক চক্রে কোনো অস্বাভাবিকতা এসেছে, তাহলে প্রথমেই একজন গাইনোকলজিস্টের সঙ্গে পরামর্শ করুন। চিকিৎসক আপনার শারীরিক অবস্থা যাচাই করে সঠিক চিকিৎসা পরামর্শ দেবেন।হরমোন থেরাপি, চিকিৎসকের প্রস্তাবিত ওষুধ বা লাইফস্টাইল পরিবর্তন মাসিকের চক্র স্বাভাবিক করতে সাহায্য করতে পারে। নিয়মিত শারীরিক কার্যকলাপ, সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং মানসিক শান্তি মাসিক চক্রের নিয়মিততা বজায় রাখতে সাহায্য করতে পারে।
মাসিকের সমস্যার কারণে অন্যান্য স্বাস্থ্যসমস্যা
মাসিকের সমস্যার ফলে অনেক স্বাস্থ্যঝুঁকি সৃষ্টি হতে পারে। উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, অথবা থাইরয়েড সমস্যার প্রভাবও মাসিকের উপর পড়তে পারে। তাই, কোনো সমস্যার সম্মুখীন হলে স্বাস্থ্য পরীক্ষার মাধ্যমে এর সঠিক কারণ খুঁজে বের করা উচিত।
মাসিক চক্রের নিয়মিততা রক্ষায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ
১. সঠিক পরিমাণে পানি পান করুন
শরীরের পানির ভারসাম্য বজায় রাখতে পানি খাওয়া খুবই জরুরি।
২. মানসিক চাপ কমান
যোগব্যায়াম, মেডিটেশন অথবা পছন্দের কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখুন।
৩. নিয়মিত শারীরিক কার্যকলাপ
সুস্থ থাকতে নিয়মিত ব্যায়াম করা উচিত।
৪. স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া
সুস্থ শরীরের জন্য পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করা জরুরি।
১৫ দিন পর পর মাসিক হওয়ার কারণে স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি ও সুরক্ষা
১৫ দিন পর পর মাসিক হওয়া সাধারণত একটি স্বাস্থ্য সমস্যার ইঙ্গিত দেয়। এটি নানা কারণে হতে পারে, এবং সঠিক সময় চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মাসিকের অসামঞ্জস্য যদি দীর্ঘমেয়াদি হয়, তবে তা আপনার সামগ্রিক স্বাস্থ্যকেও প্রভাবিত করতে পারে। তাই মাসিকের সময় কোনো অস্বাভাবিকতা দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যাওয়াই উত্তম।মাসিক চক্রের নিয়মিততা বজায় রাখার জন্য উপরের পদক্ষেপগুলি অনুসরণ করলে আপনি সহজেই সুস্থ এবং স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারবেন।